Sunday, December 6, 2015

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পুনর্পাঠ হারুন-অর-রশিদ

come to mukthi and learn the truth
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পুনর্পাঠ হারুন-অর-রশিদ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- এর সম্প্রতি প্রকাশিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী আমাদের জাতীয় রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ আকার গ্রন্থ। এতে ১৯৪৭ সালের বিভাগ-পূর্ব বাংলা ও বিভাগ-উত্তর পাকিস্তানি শাসনের গোড়ার দিকের বঙ্গবন্ধুর জীবন ঘনিষ্ঠবিচিত্র ঘটনাবলি মূর্ত হয়েছে। নিজ নেতৃত্ব ও কর্মগুণে সমকালীন রাজনীতিকদের অনেককে ছাপিয়ে তাঁর নেতৃত্বের উত্থান ইতিহাসের এ কালপর্বেও দেদীপ্যমান। বঙ্গবন্ধু রচিত গ্রন্থের এবং যে কালপর্বে তা পরিব্যাপ্ত, ড. হারুন-অর-রশিদ-এর একাডেমিক উৎসাহ ও গবেষণার খেত্রেও একই। বলা আবশ্যক, ঐ গ্রন্থ পাঠ থেকেই তাঁর পুনর্পাঠ গ্রন্থের সৃষ্টি।বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথায় ব্যক্ত বিভিন্ন ঘটনার পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক মানস-গঠন, নীতি-আদর্শ-নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দর্শন, ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় তাঁর নেতৃত্ব ও অনন্য ভুমিকা, তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, কারাস্মৃতি ইত্যাদি বিষয় পূর্বাপর সময়ের ক্যানভাসে সাজিয়ে ড. হারুন-অর-রশিদ এ গ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন।

ঢাকা জেল ১৬-৪-৫৯
রেনু,
আমার ভালোবাসা নিও। ঈদের পরে আমার সাথে দেখা করতে এসেছো ছেলেমেয়েদের নিয়ে আস নাই। কারণ তুমি ঈদ করো নাই। ছেলেমেয়েরাও করে নাই। খুবই অন্যায় করেছো। ছেলেমেয়েরা ঈদে একটু আনন্দ করতে চায়। কারণ সকলেই করে। তুমি বুঝতে পারো ওরা কতো দুঃখ পেয়েছে। আব্বা ও মা শুনলে খুবই রাগ করবেন। আগামী দেখার সময় ওদের সকলকে নিয়ে আসিও। কেন যে চিন্তা করো বুঝি না। আমার যে কবে মুক্তি হবে তার কোনো ঠিক নাই। তোমার একমাত্র কাজ হবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখানো।টাকার দরকার হলে আব্বাকে লেখিও, কিছু কিছু মাসে মাসে দিতে পারবেন। হাছিনাকে মন দিয়ে পড়তে বলিও। কামালের স্বাস্থ্য মোটেই ভাল হচ্ছে না। ওকে নিয়ম মতো খেতে বলিও। জামাল যেন মন দিয়ে পড়ে আর ছবি আঁকে। এবার একটা ছবি একে যেন নিয়ে আসে আমি দেখব। রেহানা খুব দুষ্ট ওকে কিছুদিন পর স্কুলে দিয়ে দিও জামালের সাথে।যদি সময় পাও নিজেও একটু লেখাপড়া করিও। একাকী থাকাতে একটু কষ্ট প্রথম হতো। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে কোন চিন্তা নাই। বসে বসে বই পড়ি। তোমার শরীরের প্রতি যত্ন নিও।
ইতি-
তোমার মুজিব
:: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (অসমাপ্ত আত্মজীবনী)

Saturday, October 17, 2015

Last Letter of Bangabandhu বঙ্গবন্ধুর শেষ চিঠি।

last letter of bangabandhu: http://freedomfighters71.blogspot.com/... পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর কিংবা তাকে লেখা বিভিন্ন জনের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিপত্র  
একদিকে যেমন আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক উপাদান, তেমনি আরেকদিকে বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিকদের জন্য যথেষ্ট শিক্ষণীয়। বিশেষ করে দেশ ও দেশের জনগণকে ভালোবাসলে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, কতটা কষ্টবরণ করতে হয়- সেই শিক্ষা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়ে গেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রের যথেষ্ট গুরুত্ব ও আবেদন রয়েছে। ২০০৮ সালের ফেব্র"য়ারিতে বাংলা একাডেমী থেকে আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র অসাধারণ নেতাই ছিলেন না, ব্যক্তি হিসেবেও তিনি ছিলেন মহান। দেশের জন্য জনগণের জন্য জেলজুলুমের শিকার হয়েছেন, কত ত্যাগ আর কষ্ট করে গেছেন, আজকের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত অনেক নেতার পক্ষেই সেটা কল্পনাতীত। 'বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ'-এর পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন গ্রন্থ প্রণয়নকালে আমরা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা স্পেশাল ব্রাঞ্চের দফতর থেকে বেশ কিছু নথিপত্র উদ্ধার করি। শেখ মুজিব সংক্রান্ত ওই নথিপত্রের মধ্যে অনেক চিঠি ছিল। বিভিন্নজনকে বঙ্গবন্ধুর লেখা এবং সরাসরি বঙ্গবন্ধুকে লেখা কিংবা তাকে নিয়ে নানাজনের চিঠিপত্র পাওয়া গেছে সেখানে। পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে গোয়েন্দা সংস্থা এসবি ওই সকল চিঠি বাজেয়াপ্ত করেছিল। ১৯৪৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে বঙ্গবন্ধু দু'টি চিঠি লিখেছিলেন। যা হোক, স্পেশাল ব্রাঞ্চের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিগুলো থেকে আমরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এমন অনেক কিছু তথ্য পেয়েছি যা এ যাবৎ অজ্ঞাত ছিল আমাদের কাছে; মনে হয় তেমনি বাঙালি জাতির অনেকেরও তা জানা ছিল না। রাজনীতির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি অনেক তথ্যই তাতে উঠে এসেছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি থাকাকালে ১৯৫১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তারিখে শেখ মুজিব দু'টি চিঠি লেখেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ জেনারেল সেক্রেটারি শামসুল হক এবং সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে। চিঠি দু'টি একই খামে ভরে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দারা তা বাজেয়াপ্ত করে। শামসুল হককে লেখা চিঠিতে মুজিব এক জায়গায় বলেছেন,“'... নানা কারণে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়াছি, আমার কোন কিছুর দরকার নাই। যদি ২/১ খানা ভাল ইতিহাস অথবা গল্পের বই পাঠাতে পারেন তবে সুখী হব। বহুদিন মওলানা সাহেবের কোন সংবাদ পাই নাই, এখন কেমন আছেন এবং কোথায় আছেন জানালে সুখী হব। আপনার শরীর কিরূপ, বন্ধু-বান্ধবদের আমার সালাম দিবেন কোন রকম ভয়ের কারণ নাই, তাদের জানাবেন। আমি শীঘ্রই আরোগ্য লাভ করবো বলে আশা করি, বাকি খোদা ভরসা।...'” অন্যদিকে মানিক মিয়াকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, 'শুনে সুখী হবেন, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি কারণ আর কতদিন বাবার পয়সার সর্বনাশ করা যায়। আর শরীরের অবস্থাও
ভাল না। কারণ হঠাৎ ঢাকা জেলে আসার পর থুথুর সাথে পর পর তিনদিন কিছু রক্ত পড়ে, তবে সে রক্ত সর্দি শুকাইয়াও হতে পারে আবার হাঁচি খুব বেশি হয় বলে অনেক সময় গলা থেকেও রক্ত পড়তে পারে। আর কাশের সাথেও হতে পারে, তাই নিজের থেকে হুঁশিয়ার হয়ে যাওয়া ভাল।' একই চিঠিতে বঙ্গবন্ধু আরও লিখেছেন: 'ঢাকা জেলের সুপার সাহেব খুব ভাল ডাক্তার, তাই শীঘ্রই ভাল হয়ে যাবো বলে আশা করি। চিন্তার কোনই কারণ নাই। জেলখানায়ও যদি মরতে হয় তবে মিথ্যার কাছে কোনদিন মাথা নত করবো না। আমি একলা জেলে থাকতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না। কাজ করে যান খোদা নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। আমার জন্য কিছুই পাঠাবেন না। আমার কোন কিছুরই দরকার নাই। নতুন চীনের কিছু বই যদি পাওয়া যায় তবে আমাকে পাঠাবেন। চক্ষু পরীক্ষার পর আপনাকে খবর দিবো। কারণ চশমা কিনতে হইবে। নিজেই দরখাস্ত করে আপনার সাথে দেখা করতে চেষ্টা করব।' শুধুমাত্র জেলবন্দি থাকা অবস্থাতেই নয়, জেলের বাইরে অবস্থানের সময়ও শেখ মুজিবের লেখা অনেক চিঠি স্পেশাল ব্রাঞ্চ জব্দ ও বাজেয়াপ্ত করে। ১৯৫২ সালের ২৮শে মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে শেখ মুজিব দু'টি চিঠি লেখেন ঢাকার হাটখোলা রোডে ঠিকানায় মানিক মিয়াকে এবং পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দারাবাদের ঠিকানায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। ইংরেজিতে লেখা দু'টি চিঠিই গোয়েন্দা পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে। দু'টি চিঠির মাধ্যমে দু'জনকে মুজিব জানিয়েছেন তার শারীরিক অসুস্থতা-বিশেষ করে রক্ত আমাশয়ে (Blood dysentry) আক্রান্ত হওয়ার কথা। ১৬ এপ্রিলের আগেই ঢাকায় রওয়ানা হওয়ার কথা। মানিক মিয়াকে চিঠিতে তার পত্রিকা যে কোন মূল্যে চালিয়ে যাওয়া এবং তার জন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে শেখ মুজিব দলীয় কর্মী ওয়াদুদ (ইত্তেফাকে কর্মরত। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির পিতা) অসুস্থ অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে তার জন্য গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছে লেখা চিঠিতে তাকে দেখার অধীর আগ্রহ ব্যক্ত করার পাশাপাশি শেখ মুজিব তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কিত মন্তব্যের সঙ্গে নিজের শারীরিক অবস্থা-বিশেষ করে বিগত আড়াই বছরের
কারারুদ্ধ অবস্থায় তার শরীর ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টিও জানিয়েছেন। হাটখোলা রোডে মানিক মিয়ার ঠিকানায় তাকে চিঠি লেখার অনুরোধ জানিয়ে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের মাধ্যমে বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের সালাম জানিয়েছেন শেখ মুজিব। ১৬ এপ্রিলের পূর্বে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগে মানিক মিয়ার একটি চিঠির জবাবে ৬ এপ্রিল মুজিব টুঙ্গিপাড়া থেকে আরেকটি চিঠি লিখেছেন। মানিক মিয়াকে ইংরেজিতে লেখা সে চিঠিটাও গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকার ওয়ারী পোস্ট অফিস থেকে জব্দ করে। ওই চিঠিতে বঙ্গবন্ধু ঢাকার মানিক মিয়ার সঙ্গে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কারণ তার অসুস্থ শরীরে হোটেলের খাবার সহ্য হবে না। ওই চিঠি পড়ে জানা যায়, ১৫ এপ্রিল গোপালগঞ্জে তার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় প্রদানের কথা আছে, রায় কী হবে সেটা তিনি জানেন না। তবে যে কোনো পরিস্থিতি বরণ করতে তিনি প্রস্তুত। চিঠিতে শেখ মুজিব বলেন, 'Manik Bhai I can not forget your love and affection (মানিক ভাই, আমি আপনার ভালবাসা এবং স্নেহের কথা বিস্মৃত হতে পারি না।)' বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পথ কুসুমার্স্তীর্ণ ছিল না। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংগ্রাম করে যে তাকে এগোতে হয়েছে স্পেশাল ব্রাঞ্চের ফাইল থেকে পাওয়া চিঠিপত্রে বর্ণিত বিষয়গুলিই তার সাক্ষ্য। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আর মিথ্যা মামলায় তাকে বার বার জেলে যেতে হয়েছে। তাতে তিনি কাবু হন নি। ১৯৫৮ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক বন্দি থাকা অবস্থায় বাবা শেখ লুৎফর রহমানকে লেখা পুলিশ কর্তৃক বাজেয়াপ্ত এক চিঠিতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, '... মা এবার খুব কষ্ট পেয়েছিল; কারণ এবার তার সামনেই আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। দোয়া করবেন
মিথ্যা মামলায় আমার কিছুই করতে পারবে না। আমাকে ডাকাতি মামলার আসামীও একবার করেছিল। আল্লাহ আছে, সত্যের জয় হবেই। আপনি জানেন, আমার কিছু নাই। দয়া করে ছেলেমেয়েদের দিকে খেয়াল রাখবেন। বাড়ি যেতে বলে দিতাম। কিন্তু ওদের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে।' আজ নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধু পরিবারকেও কম ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়নি। শেষ পর্যন্ত তো জাতির পিতার সঙ্গে সবাই আত্মহুতি দিয়েছেন কেবলমাত্র দুই কন্যা ব্যতীত। এ লেখার প্রতিপাদ্য স্পেশাল ব্রাঞ্চের ফাইল থেকে পাওয়া বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রের মধ্যেই সীমিত রাখতে চাই। ওই চিঠিপত্রে আমরা দেখতে পাই, গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে পরিবারের সদস্যরা কেবল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গই বঞ্চিত হননি, বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে তাদেরকে ষাটের দশকের গোড়ায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে স্থিতিশীল হওয়ার আগ পর্যন্ত বার বার ঠিকানা বদল করতে হয়েছে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় তখন অনেকেই তাদের বাড়ি ভাড়া দিতেও ইতস্তত করতেন। পঞ্চাশ দশকে জেলের বাইরে অবস্থানের সময় শেখ মুজিবকে একেক সময় একেক ঠিকানা ব্যবহার করতে দেখা গেছে বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রে। অনেক চিঠিতে তিনি আবার তৎকালীন পূর্ব পকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের ৯৮,
নবাবপুর রোডের কার্যালয়ের ঠিকানাও ব্যবহার করেছেন। ১৯৫২ সালের ১৪ জুনে লাহোর থেকে লিখিত সিন্ধু হায়দারাবাদে অবস্থানরত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে লেখা চিঠিতে বঙ্গবন্ধু তার ঠিকানা দিয়েছেন ঢাকার ৭১, রাধিকা মোহন বসাক লেন। ওই চিঠিতে মুজিব তার তৎকালীন নেতা মোহরাওয়ার্দীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, 'Please dont think for me. I have born to suffer. (অনুগ্রহ করে আমার জন্য ভাববেন না, আমার জন্মই হয়েছে কষ্ট ভোগের জন্য)।' ১৯৫৮ সালের ২১ নভেম্বর, ১২ ডিসেম্বর ও ২৩ ডিসেম্বর এবং ১৯৫৯ সালের ৫ই জানুয়ারি, ২৯ জানুয়ারি ও ১৮ ফেব্র"য়ারিতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে স্ত্রী সন্তান ও আইনজীবীসহ অন্যান্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চেয়ে ডিআইজ, এসবি পূর্ব পাকিস্তান রবাবরে লিখিত আবেদনপত্রসমূহে বঙ্গবন্ধু তার সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছার ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, 'Mrs. Fazilaton Nesa, C/O- Sheikh Mujibur Rahman, in front of Sideshwari High School, Dacca. (মিসেস ফজিলাতুন্নেছা, প্রযতে� শেখ মুজিবুর রহমান, সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে, ঢাকা।)' বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্রের সূত্রে দেখা যায়, কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়ে শেখ মুজিব ১৯৫৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা পুলিশ সুপারকে জব্দকৃত জীপ ফেরতদানের, ১৯৫৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর লাইসেন্সকৃত বন্ধুক ও পিস্তল ফেরতদানের, ১৯৬০ সালে ১৮ মার্চ জেল থেকে মুক্তি পাবার পর সরকারকে নিজ গতিবিধি সম্পর্কে, ২২ জুলাই ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় রওয়ানা হওয়ার বিষয়ে প্রভৃতি দরখাস্তে বঙ্গবন্ধু তার ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, '76, Segun Bagicha, Ramna, Dacca-2 (৭৬ সেগুনবাগিচা, রমনা, ঢাকা-২)'। আবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় যাওয়ার পর ১৯৬২ সালের ৩ এপ্রিল থেকে নিরাপত্তা বন্দি হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবেদনপত্রে তাদের ঠিকানা হিসেবে '677 Dhanmondi residencial Area, Road No. 32, Dacca (৬৭৭ ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, সড়ক নম্বর ৩২, ঢাকা।)' উল্লেখ করা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর বাজেয়াপ্ত চিঠিপত্র সূত্রে জানা যায়, জেলখানায় বসেও তিনি অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কারাগারের বাইরে মুক্ত থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক নেতা ও সহকর্মীদের খোঁজ খবর নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মত বিনিময়ের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ১৯৫২ সালের ২৩ আগস্ট ঢাকার নবাবপুরের আওয়ামী মুসলিম লীগের দফতর থেকে করাচির কূটচেরি রোডে সোহরাওয়ার্দীর ঠিকানায় বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, তার ও আতাউর রহমান খানের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে সফর বিপুল সাড়া জাগালেও সংগঠনের জন্য অর্থের প্রয়োজন। পাটের মূল্য কম থাকায় সাধারণ মানুষ অভাব-অনটনে আছে। তাদের কাছে তহবিলের জন্য আবেদন করা যাবে না। একইভাবে ইত্তেফাক-এর প্রকাশনা অব্যাহত রাখার জন্য আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং অভিভাবকতুল্য সহকর্মী তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকেই নয়, অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মী- এমন কী মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও চিঠি লিখে তাদের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। কারাগারের ভেতর এবং বাইরে থেকে লেখা এ ধরনের চিঠিও তখনকার পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দারা জব্দ করতেও দ্বিধা করেনি। পাকিস্তান সরকারের বাজেয়াপ্ত করা চিঠিপত্র থেকে একটি জিনিস স্পষ্টই বোঝা যায় যে রাজনৈতিক সহকর্মী বা দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অপরিসীম দরদ। অনেক সময় তিনি তাদের পরিবার-পরিজনকে চিঠি লিখে সান্ত্বনা বা সহমর্মিতা জানিয়েছেন। ছাত্রনেতা খালেক নেওয়াজ গ্রেপ্তার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ৬ জুলাই নববাবপুর রোডের দলীয় কার্যালয় থেকে খালেক নেওয়াজের মায়ের উদ্দেশ্যে আচারগাঁও, পোস্ট নান্দাইল, ময়মনসিংহের ঠিকানায় একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে তিনি বলেন, '... আপনার ছেলে খালেক নেওয়াজ আজ জেলখানায়। এতে দুঃখ না করে গৌরব করাই আপনার কর্তব্য। যদি কোন কিছুর দরকার হয়, তবে আমায় জানাতে ভুলবেন না। আমি আপনার ছেলের মত। খালেক নেওয়াজ ভাল আছে। জেলখানা থেকেই পরীক্ষা দিচ্ছে। সে মওলানা ভাসানী সাহেবের সাথে আছে।' তেমনি আবার ১৯৬৬ সালের ৪ আগস্টে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বগুড়া জেলা কারাগারে বন্দি নূরুল ইসলাম চৌধুরীকে লিখিত এক চিঠিতে শেখ মুজিব বলেন, 'বোধহয় আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে। ভাবী বুড়া হয়েছেন, বার বার বগুড়া যেতে কষ্ট হয়। কেমন আছেন আমাকে জানালে বাধিত হব। আমি অনেক জেল খেটেছি আমার জন্য ভাববেন না।' বিভিন্ন জনকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিই শুধু নয়, বঙ্গবন্ধুকে লেখা অনেকের চিঠিও পাকিস্তান সরকারের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বাজেয়াপ্ত করেছিল। সে সকল চিঠি থেকে জাতির জনক সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বড় কথা হলো, এসব চিঠিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের আবেগ ও উদ্বেগসহ অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার টান পরিস্ফুট হয়েছে। ১৯৫১ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকার ১৮ নং কারকুন বাড়ি লেন থেকে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মুজিবকে লেখা একটি চিঠিতে বলেন, '.... তোমার মুক্তির জন্য সরকারের দৃষ্টি বহুবার আকর্ষণ করিয়াছি, কিন্তু ছেলে অন্ধ হইলে নাম পদ্মলোচন রাখলে লাভ কি। ধৈর্য ধারণ কর।
আল্লাহ তোমার সঙ্গে আছেন। দেশের মুক্তির সঙ্গে তোমার মুক্তি।' ১৯৫২ সালের ২৯ মার্চ ঢাকা থেকে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া টুঙ্গিপাড়ার ঠিকানায় বঙ্গবন্ধুকে লেখা এক চিঠিতে উল্লেখ করেন : 'The condition at Dacca is still uncertain. Arrests are continuing. Shamsul Haq has surrendered on 19th. Khaleque Newaz and Aziz Ahmed surrendered on 27th & 28th respectively. There is no information from Moulana Sahib. Long ago we recived communication from him that he was suffering from blood pressure. (ঢাকায় পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত। ধরপাকড় চলছে। শামসুল হক আত্মসমর্পণ করেছেন ১৯ তারিখে। খালেক নওয়াজ এবং আজিজ আহমেদ যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ তারিখে আত্মসমর্পণ করেছেন। মওলানা সাহেবের কাছ থেকে অনেক দিন কোন খবর নেই। শুনেছিলাম তিনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন।)' বঙ্গবন্ধুকে লেখা নামজাদা ব্যক্তিবর্গের নয়, মাঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মীর লেখা চিঠিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। শেখ মুজিব যখন আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তখন ঢাকার জিপিও থেকে আটক ও বাজেয়াপ্তকৃত ঢাকার পল্টন হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র আবদুল কাদের মিয়ার চিঠিতে বলা হয়, '... এখন হইতে পত্রিকা ও ২ খানা 'আওয়ামী লীগের' ম্যানিফেস্টো পাঠাইয়া দিলে 'আওয়ামী লীগ' আরেও জনপ্রিয় হইয়া উঠিবে। ইহাই আমার আকুল প্রার্থনা, আপনার নিকট, ভাই সাহেব আপনার সহকর্মীদের কাছে আমার সালাম বলিবেন।' ১৯৫৪ সালের ৮ অক্টোবর গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা বন্দি শেখ মুজিবের ঠিকানায় চিঠি লেখেন জনৈক শহীদ। মুজিবকে 'ভাইজান' বলে সম্বোধন করে ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন,
'... অনেকে কাঁদে, অনেকে দুঃখ করে আর আমাদের অপবাদ দেয়। বলে তোমরা কেন 'তাকে' জেলে রেখে চুপ করে বাইরে আছ। গোপালগঞ্জের মানুষ প্রতিটি মুহুর্তে তারা ফরিয়াদ জানায় আল্লাহর কাছে তাদের প্রিয় নেতার জন্য। কত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আল্লাহর দরবারে ' রোজা নামাজ মানত' করে আপনার মামলার তারিখে।' ১৯৬৬ সালের ১৫ অক্টোবর কুমিল্লার উত্তর চর্থা থেকে মো. আছমত আলী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মুজিবকে এক চিঠিতে বলেন, '... ক্ষুদ্র জীবনে দেশ ও সমাজের জন্য সত্যিকারভাবে 'সেবার' মনোভাব নিয়া যতটুকু কাজ করিতে পারিয়াছি তার জন্য মালিকের দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করিতেছি, সত্যিকারের কর্মীরা পদ মর্যাদা ও অর্থ লোভের জন্য রাজনীতি করে না। সেই জন্য তাদের স্ত্রী-পরিবার ঔষধের অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। জেলে গেলে এদের পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন স্বযং খোদা। বিশেষ আর কি লিখিব। কায়মনবাক্যে সর্বশক্তিমানের দরবারে আপনার মঙ্গল কামনা করি,
দোয়া করিবেন।' মো. আছমত আলীর একই চিঠিতে পুনশ্চ হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শেষ পত্রের দু'টি বাণীর উদ্ধৃতি দেওয়া আছে, (১) কেউ যদি কাজ না করে তবে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। কেবল জনসভা করাই যথেষ্ট নয়। মুসলিম লীগকে গড়তে কী পরিশ্রম না আমরা করেছি। আজও ঠিক সেইভাবে ব্যাপক খাঁটা-খাটুনির দরকার। (২) .. মনে হয় না, রাজনীতি করার মত মন আমার হবে। আয়কর আর দেনাদায়িক মিটানোর জন্য সব কিছু ছেড়ে আমাকে টাকা আয়ে মন দিতে হবে। দেখ আমরা যারা আগের জমানার নেতা তারা কেবল নিয়মতান্ত্রিক পথেই চলতে জানি কিন্তু তাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। --------------------------------------------------------------------------------------- লিখেছেন : মোনায়েম সরকার , রাজনীতিক ও গবেষক  

Thursday, October 15, 2015

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সারা দিন।

come to mukthi and learn the truth
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সারা দিন। 
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে শেখ হাসিনার সতর্কবানী
জনগণের জন্য খুলে গেল রাজধানীতে নির্মিত এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় উড়াল সেতু ‘কুড়িল ফ্লাইওভার’। তিন কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ এই ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বলেছিলেন, ‘আজ আমরা যে পরিকল্পনাগুলো হাতে নিয়েছি সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।’ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার কাজে আওয়ামী লীগ সরকারকে সহযোগিতা করুন।" তিনি যথার্থই বলেছিলেন ‘আমরা ক্ষমতায় থেকেও অনেকগুলো নির্বাচনে হেরে গেছি। জনগণ ভোটের মালিক, তারা ভোট দেবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে, আমরা তাকেই মেনে নেব। তবে সৎ ব্যক্তিকে রেখে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের বেছে নিলে আমাদের কিছুই বলার নেই। জনগণকে আমি সতর্ক করে বলতে চাই, তারা যেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও যারা দেশের উন্নয়ন করে- তাদেরকে যেন ভোট দেয়। ভোট তাদের আমানত, এটা যেন অপাঙ্ক্তেয়দের দান করে খিয়ানত না করেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানি না বাংলাদেশের জনগণ আবার কি সেই অন্ধকারের যুগে ফিরে যেতে চায়। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, কালো টাকা, দুর্নীতি- সেখানেই ফিরে যেতে চায়। সেই অন্ধকারের যুগেই আমরা কি ফিরে যাব? নাকি আলোকিত পথে আমরা এগিয়ে যাব? আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, যেন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি।’ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বেগম সাহেবাকে জননেত্রী বলেছিলেন "তিনি নাকি নতুনভাবে দেশ পরিচালনা করবেন। অর্থাৎ নতুনভাবে দুর্নীতি করার নতুন কোন পদ্ধতি তিনি আবিষ্কার করেছেন।’ ৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের মাধ্যমে রাজধানী এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল।দেশের অগ্রগতি তাদের মূলকথা ছিল না। মূলকথা ছিল কী ভাবে টাকা বানানো যায়। কিভাবে আরো একটি হাওয়া ভবন তৈরী করে জনগণের অর্থ সম্পদ লুণ্ঠন করা যায়- সে প্রয়োজনেই খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় আসার প্রয়োজন ছিল। শেখ হাসিনা আরো বলেছিলেন "একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে যদি তিনি কালো টাকা বানান, দুর্নীতি করেন আর জরিমানা দিয়ে তাঁকে শোধ করতে হয়, তাহলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে দুর্নীতি কোন পর্যায়ে ছিল তা জনগণকে বিবেচনা করার অনুরোধ করব। একইসঙ্গে বর্তমান সরকারের সঙ্গে বিগত জোট সরকারের শাসনামলকেও তুলনা করে দেখতে বলব। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে আগের সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, "একটি সরকার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হলে সামনে এগোতে পারে না।  
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও মানুষের মাথাপিছু আয় ও রিজার্ভ বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় এখন বিদেশে গিয়ে মানুষ চাকরি করতে পারছে। আওয়ামী লীগ সরকার রাজধানীর উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) আওতায় আধুনিক ঢাকা গড়তে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে মিরপুর-বিমানবন্দর ফ্লাইওভার, বনানী রেললাইনে ওভারপাস এবং সংযোগ-সড়ক চালু এবং হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বলেন, কুড়িল ফ্লাইওভার ঢাকার গেটওয়ে এবং আধুনিক পূর্বাচল সিটির এন্ট্রি পয়েন্ট হবে। এতে পূর্বাচলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়ে যানজট কমবে এবং অর্থনৈতিক খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।শেখ হাসিনা বলেন, যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শেষের দিকে। এছাড়া ২৬ কিলোমিটার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের কাজও পূর্ণোদ্যমে চলছে। শান্তিনগর থেকে ঢাকা-মাওয়া সড়কে ঝিলমিল পর্যন্ত আর একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে।
কুড়ীল ফ্লাইওভার ব্যবহার করে উত্তরা ও বনানী থেকে সহজেই প্রগতি সরণি হয়ে রামপুরার দিকে যাওয়া যাবে। এর ফলে কুড়িল বিশ্বরোড ক্রসিং এলাকার যানজট অনেকটা দূর হবে বলে এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধন শেষে সেখানে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার গঠনের পর এমন কোন খাত নেই- যেখানে উন্নয়ন হয়নি। এরই অংশ কুড়িল ফ্লাইওভার। দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ ছিল বলেই এই সেতুর কাজ দ্রুত শেষ হয়েছে। জোট সরকারের আমলে দুর্নীতিকে তারা ‘নীতি হিসেবে’ গ্রহণ করেছিল বলেই উন্নয়নমূলক কোন কাজ সামনে এগোয়নি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ হয়ে গিয়েছিল জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির দেশ। পাঁচবার দুর্নীতিতে দেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। বিগত জোট সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরতে গেলেই "খাম্বা লিমিটেড ও ড্যান্ডি ডায়িংয়ের" নামে সোনালী, জনতা এবং বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংক থেকে বি এন পি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুই পুত্র, ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা ৯৮০ কোটি টাকার মতো লুটপাট করে নিয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে সুদসহ মওকুফ করিয়েছে।
অপর দিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে এবং এর কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং ইনশাহ আল্লাহ্‌ শেষও হবে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে। যার সব টুকুন প্রশংসার দাবীদার আওয়ামী লীগ সরকার তথা জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। দারিদ্র্যতার "অভিশাপ" থেকে বাঙ্গালী জাতিকে মুক্তি দিয়ে একটি সুখি সম্রিদ্ধাশালী দেশ হিসেবে অনতিবিলম্ভেই বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সারিতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে জনগণের ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে ধর্ম প্রতিষ্ঠার অযৌক্তিক সাম্প্রদায়িক বিশ বপনে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন, দেশের মানুষ উন্নয়ন চায়। আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের সংগঠন। কেবল এই দল ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। জনগণ দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কখনও কোন নীলনকশা মেনে নেয়নি। তারা ধ্বংসাত্মক কর্মকানড, পবিত্র কোরান শরীফ ও জায়নামাজে অগ্নিসংযোগ, মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়া বা নারীদের সম্পর্কে কোন ভুল ব্যাখ্যা বা আপত্তিকর মন্তব্য মেনে নেয়নি। বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের অপপ্রচার এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের হাত থেকে দেশ রক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে । ঢাকা মহানগরীর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য রক্ষা এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি আধুনিক শহর গড়তে সরকারের প্রচেষ্টায় সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।

Saturday, October 10, 2015

ধিক! মূর্খ অর্বাচীন অদূরদর্শিনী বেগম খালেদা জিয়া!

come to mukthi and learn the truth
ধিক! মূর্খ অর্বাচীন অদূরদর্শিনী বেগম খালেদা জিয়া! 
১/১১ খ্যাত ২০০৬-২০০৭ সালের মহা চক্রান্তকারী ডঃ ফখরুদ্দিন আহমেদ, জেনারেল মঈন, আহমেদ কোরেশী, ভোরের আলু মতিউর রহমান, ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন ও ডঃ কামাল বা ডঃ ইউনুসগংদের সকল চক্রান্তই বিফলে গিয়েছিল। শত চেষ্টায়ও জাতিকে বিভক্ত করতে পারেনি। পারেনি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে খাদ্যের সাথে বিষক্রিয়ার সংমিশ্রণে মেরে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্রের নীল নকসা বাস্তবায়ন করতে। কোন ডঃ কামাল-ইউনুসের হীন কূটকৌশলই বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করতে পারেনি। তা'সে যতো বড় কালো হাতই হোক। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে হেয়প্রতিপন্ন করার, ক্ষমতাচ্যুত করার মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আল আমিন। এ ক্ষমতা কোন ডঃ, জেনারেল বা সুদখোড় ঘুষখোর দইওয়ালার কৃপায় প্রাপ্ত হয় না । যতোদিন বাংলার মাটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সর্বশেষ একজন আদর্শ সৈনিকও বেঁচে থাকবে, যতোদিন নৌকার একটি ভোটারো বাংলার কোন একটি নিভৃত পল্লীতে জয় বাংলার প্রতি বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ ও দেশপ্রেমের আদর্শিক চেতনা ও প্রত্যয় নিয়ে জীবিত থাকবে, ততোদিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে। টিকে থাকবে স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ত্ব; টিকে থাকবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযোদ্ধা, ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ৪০ হাজার সম্ভ্রম হারানো মা বোনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা ও সন্মান । দুনিয়ার কোন হায়েনা পেশীশক্তিবলে এ পবিত্র মাটির একটি ক'নাও ছুঁতে পারবে না। যেমন পারেনি ৭১এর ঘনকাল মূমূরষ দিনগুলিতেও। আজ যারা ভারতের দালাল বলে আওয়ামী লীগকে ধিক্কার দেয়, ধর্মের নামে জাতিতে জাতিতে ভেদাভেদ, মানুষে মানুষে হিংসা বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামার দিকে দেশকে ঢেলে দিতে চাইছে, ভাইয়ে ভাইয়ে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টানের লেবাস পড়িয়ে বাঙ্গালী জাতির আজীবনের ঐক্যবন্ধনে বিভাজনের বিষ বৃক্ষ রোপণের পায়তারা করছে। ওরা দেশদ্রোহী পশ্চিমা পাকি প্রভূদের পা’চাটা লোভী কুকুর। ৭১ এ বাঙ্গালি জাতিকে কামড় দেয়া শুয়োরের বাচ্চা এখন বড় হয়ে কামড় দিতে শিখেছে। ওদের কোন ধর্ম নেই, জাত নেই, বংশ নেই। ওরা মানুষরূপী অমানুষ; ধর্ম ব্যবসায়ী জানোয়ার-নরপশু । 

ওদের মূখে সারাক্ষণ ভারত বিদ্বেষী কথার ফুলঝুরিঃ 


“ভারত এটা করেছে, ভারত দেশটাকে লুটে নীল, ভারত বাংলাদেশের ইসলামকে হিন্দু তত্ত্ব দিয়ে হিন্দুস্থান বানাতে চাইছে শেখ হাসিনা ভারতের নিকট দেশ বিক্রয় করে ফেলেছে ইত্যাদি ইত্যাদি অথচ যেয়ে দেখুন,ওদের ঘরে ২৪ ঘন্টা হিন্দি সিরিয়াল চলে, হিন্দি সিনেমা না দেখলে ওদের ঘুম হয়না। ওদের বউ ঝি'রাই ভারতের থ্রি পীচ আর শাড়ী না পড়লে কোন অনুষ্ঠানে যেতে পারে না। দিনে ভারত বিদ্বেষী বয়ানে মূখে থুবড়ি বেড়িয়ে আসে, আর রাতে হিন্দি ছবি না দেখলে ঘুম আসে না। একদিকে ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার অন্যদিকে গোপনে ভারতের কাছে বিশেষ চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব দিয়ে গত নির্বাচনে সমর্থন আদায়ের জন্য তেল মালিশ করা” ।
বুঝে দেখুন, বুকে হাত দিয়ে বলুন, পাকিস্তানের হায়েনা পশুর দল ৭১ এ ৩০ লক্ষ বাঙ্গালিকে হত্যা এবং ২ লক্ষ ৪০ হাজার মা বোনের ইজ্জত লুন্ঠনকারী কিভাবে আমাদের বন্ধু হয়? যে পাকিস্তান বাংলার মাটির লোভে বাঙ্গালি নিধন করেছিল, তারা কিভাবে বন্ধু হয়? ভারতের সাথে আমাদের পারস্পরিক শিল্প বানিজ্য সাংস্কৃতিক ও ভোউগলিক সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ হিসেবেই দেনা পাওনা/হিসেব নিকেশের বহুবিধ সমস্যা- দ্বন্দ- বিভেদ মতভেদ থাকতেই পারে। ভাইয়ে ভাইয়ে যদি সম্পদ বন্টন সংক্রান্ত বিভেদ থাকতে পারে, তাহলে ভারতের সাথেও থাকাটা অতি সাভাবিক। উভয় দেশের সার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনার সরকার একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে যার আশু বাস্তবায়ন কিয়দাংশ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে এবং অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা চলছে, যার সমূহ সম্ভাব্য সমাধানের জন্য দ্বিপাক্ষিক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে। 
শেখ হাসিনা বরাবরই বলে থাকেন যে আমাদের কোন প্রভূ নেই, রয়েছে বন্ধু এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। যার প্রমান তিস্তা নদীর পানির হিস্যার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ঠিক জাতির জনকের মতোই কঠোর ভাষায় ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মূখারজীকে ষ্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন” নো তিস্তা, নো ট্রানজিট”। সর্বোপরি, কোন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই জননেত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদন করেছেন। কই? বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা বিবিও তো দুই দুই বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন? তিনি কেনো তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়টির সমাধান করলেন না? মাঝে মাঝে খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনলে হাসি পায় আবার দুঃখও লাগে। তিনি কখনোই বাংলাদেশের সমূদ্র সীমানা নিয়ে মাথা ঘামাননি এবং মায়ানমারের কাছে বাংলাদেশের ন্যায্য হিসসার দাবী তোলেন নি। তিনি মূখ খুললেন যখন জননেত্রী শেখ হাসিনা মায়ানমারের নিকট থেকে বাংলাদেশের ন্যায্য হিসসা বুঝে নিলেন। বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া সমুদ্র ভুখন্ড যেদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনা উদ্ধার করে বিশ্বের কাছে, জাতি সংঘের কাছে এক আপোষহীন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সন্মানিত হলেন। খালেদা জিয়া বললেন “শেখ হাসিনা সরকার মায়ানমারের কাছ থেকে বাংলাদেশের আসল পাওনা বুঝে আনতে পারেনি, আমরা আরো পাবো।বি এন পি সরকার হলে পুরো পুরি বুঝে নিতো। আজ দেশবাসীর কাছে আমার একটি প্রশ্নঃ তিনি কোথায় ছিলেন ১৯৯১-১৯৯৫ এবং ২০২০১-২০০৬ সালে? কি সারাদিন ফালু আর রাজাকারদের সাথে চক্রান্তের জাল বুনোনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন? নাকি শেখ হাসিনাকে হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র আর পাকিস্তানের দেয়া অর্থের হিসাব করতে করতে ভুলেই গিয়েছিলেন যে আমাদের সমুদ্রের অনেক খানি ভুখন্ড মায়ানমার সরকার দখল করে রেখেছে? 
ধিক! খালেদা জিয়া ধিক! আপনার মূর্খ অর্বাচীন রাজনৈতিক অদূরদর্শিতাকে। আপনি বাংলার নিরীহ সহজ সরল দুখি মানুষকে আর কতো বোকা বানাবার চেষ্টা করবেন? জননেত্রী শেখ হাসিনার সাফল্যে আপনার এতো জ্বলন কেন? 
মুক্তিযোদ্ধা কণ্ঠশিল্পী 
মোকতেল হোসেন মুক্তি 
সহ সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী তরুণ লীগ
সভাপতি সময়’৭১
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি 
মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ। 
সংগীত শিক্ষক 

Tuesday, September 29, 2015

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইঃ রমরমা ব্যবসা বাণিজ্য এবং আওয়ামী লীগ মন্ত্রী মোজাম্মেল হক

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ 

১। বেঠিক পদ্ধতিতে ‘সঠিক’ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের কাজটি ভেস্তে যেতে বসেছে। বিদ্যমান ২ লাখ ৩০ হাজার সদস্যের মধ্যে কারা ভুয়া, তা যাচাই-বাছাই এবং নতুন অন্তর্ভুক্তির জন্য সারা দেশে কমিটি করে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শতাধিক কমিটির সদস্যদের নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, ৩৫টি উপজেলার ৪৫টি কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের, নতুন আবেদন জমা পড়েছে প্রায় দেড় লাখ! এভাবে বারবার আমলা ও রাজনীতিবিদদের দিয়ে ত্রুটিপূর্ণ তালিকা তৈরি করা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার শামিল। পাশাপাশি, এ ধরনের তালিকার সুবাদে মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া রাষ্ট্রীয় সুবিধাও বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রথম আলোর সোমবারের সংবাদ থেকে দেখা যাচ্ছে, মৃত ও ভিন্ন এলাকার ব্যক্তিকেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই-বাছাই কমিটিতে রাখা হয়েছে। একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। সারা দেশ থেকে ‘মুক্তিযোদ্ধারাই’ এসব অভিযোগ করছেন। ইতিমধ্যে কমিটির সম্মানী ও খরচ বাবদ প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রতিটি সরকার আসে আর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে যায়। ছয়বার তালিকা সংশোধিত হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও মানদণ্ড বদলেছে ১০ বার! আমাদের হাত দিতে হবে সমস্যার গোড়ায়। তালিকা প্রণয়ন আমলা ও রাজনীতিবিদ বা সাংসদনির্ভর হলে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত লাল মুক্তি বার্তা, ভারতীয় তালিকা, বিভিন্ন রেজিমেন্ট ও সেক্টর কমান্ডের তালিকা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষকদের মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, জেনারেল ওসমানীসহ যাঁদের সই জাল করে নকল সনদ বানানো হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করা অসম্ভব নয়। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা, বয়স ও তালিকা প্রণয়নপদ্ধতি বিষয়ে পরীক্ষিত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা, নাতি-নাতনি পর্যন্ত সংরক্ষিত চাকরির কোটাসহ আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধার সুযোগ নিতেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ভুয়া ব্যক্তিরা ঢুকে পড়েছেন। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের মত প্রণিধানযোগ্য। তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘সরকার যদি এখন ঘোষণা দেয় মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হবে না এবং আহত ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছাড়া আর কাউকে কোনো সুবিধা দেওয়া হবে না, তাহলে কাল থেকে আর কেউ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তুলতে চাইবে না।’
২। ১৭ নভেম্বর ২০১৭ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত সোমবার জাতীয় সংসদে যা বলেছেন, তা পুরো সত্য নয়। আংশিক সত্য। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, তিনি তার পুরো দায় আদালতের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কোনো তালিকা নিয়ে আপত্তি ওঠার পরই সেটি আদালতে গিয়েছে। মন্ত্রণালয় যদি পুরো তালিকা বাতিল না করে নাম যাচাই–বাছাই করে আপত্তি জানাত, তাহলে বিষয়টি হয়তো আদালতে যাওয়ারই প্রয়োজন হতো না।
মন্ত্রী মহোদয়ের ভাষ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁর বয়স চার বছর ছিল, তাঁকেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে আদালত তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশে তিনি বিব্রতবোধ করছেন বলে জানিয়েছেন। কোনো তালিকায় চার বছরের শিশুকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর চেষ্টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আশা করি, উচ্চতর আদালতে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এর প্রতিকার পাওয়া যাবে। জাতীয় সংসদের স্পিকারও সে রকম পরামর্শ দিয়েছেন।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল (জামুইকা) মুক্তিযোদ্ধা তালিকা তৈরিতে যে কী পরিমাণ অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে, তার ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে। মন্ত্রী মহোদয়ের নিশ্চয়ই মনে আছে, আরও অনেকের মতো ২০১৪ সালে পাঁচ সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল হয়ে গিয়েছিল, যার মধ্যে খোদ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবও ছিলেন। ভুয়া সনদ দিয়ে তাঁরা চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময়ে কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় কিংবা মন্ত্রণালয়ের কোনো পদাধিকারীকে বিব্রত বোধ করতে দেখা যায়নি। তখন মন্ত্রণালয় শক্ত ব্যবস্থা নিলে হয়তো আমরা আগেই একটি নির্ভুল তালিকা পেতাম।
কেবল মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নয়, মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি সুহৃদদের দেওয়া স্বর্ণপদকে খাদ মেশানোর কাজটিও হয়েছিল মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের যোগসাজশে। আর সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বদলের পেছনের রহস্যটা জানা দরকার।
কোনো তালিকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা থাকলে অবশ্যই তাঁর নাম বাদ দিতে হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতির শ্রেষ্ঠ ঘটনা। সেই মুক্তিযুদ্ধের বীরদের তালিকা নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হোক।
৩। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ থামছে না
*অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে তালিকায় নাম তোলার অভিযোগ *ভাতাপ্রাপ্ত ২৪৭ জন বাদ পড়ায় গোপালগঞ্জে মানববন্ধন।
সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই নিয়ে বিতর্ক চলছেই। একদিকে অভিযোগ উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম রাখার জন্য অর্থ লেনদেনের, অন্যদিকে আপত্তি উঠেছে কমিটির সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন আবেদন করা ৯০ ভাগের দেওয়া তথ্যই ভুল। পাশাপাশি যাঁরা যাচাই-বাছাই করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও উঠেছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ।
এসব কারণে নির্ধারিত সময়ে যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়নি। মাঠপর্যায় থেকে ২০ মের মধ্যে যাচাই-বাছাই করা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) না পৌঁছালে আগামী অর্থবছর থেকে সম্মানী ভাতা বা উৎসব ভাতা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হলেও অর্ধেক আবেদনও পৌঁছায়নি। নিয়ম ভঙ্গ করে এখনো চলছে যাচাই-বাছাই।
মুক্তিযোদ্ধার পুরোনো তালিকায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এবং যাঁরা নতুন করে সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১২ জানুয়ারি একটি গেজেট প্রকাশ করে। সারা দেশে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৪৮৮টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি কাজ শুরু করে ২১ জানুয়ারি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য অনলাইনে জমা পড়ে প্রায় দেড় লাখ আবেদন।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এ পর্যন্ত জেলা পর্যায় থেকে যে তালিকা এসেছে, তাতে ৫ শতাংশও মুক্তিযোদ্ধা নন। আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ এসেছে, তা খতিয়ে দেখছি। টাকা লেনদেনের বিষয়ে আমাদের কাছেও অভিযোগ এসেছে।’
অভিযোগের পর অভিযোগ
গত বুধবারও মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে গোপালগঞ্জের ভাতাপ্রাপ্ত ২৪৭ জন বাদ পড়ায় এলাকায় মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মজিবর রহমান অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, মুক্তিবার্তা, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সনদে নাম থাকার পরও যাচাই-বাছাই কমিটি ‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ ২৪৭ জনকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। অন্যদিকে কাগজপত্র নেই এমন ৫৫২ জনকে যাচাই-বাছাই কমিটি সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তবে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য গোপালগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সরকার একটি নীতিমালা করেছে এবং সে অনুযায়ী যাচাই-বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।’এর আগে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম নিয়ে কমিটির দুই সদস্যের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় ৮৯ জন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই নিয়ে কমিটির সদস্য মহসীন উদ্দিন এবং আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, তাঁরা যাচাই-বাছাইয়ের নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।মহসীন উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, যাচাই-বাছাইতে কিছু অমুক্তিযোদ্ধা ও ভুয়া ব্যক্তি তালিকাভুক্ত হওয়ার চেষ্টায় মিথ্যা অভিযোগ করেছে।আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ার অভিযোগ ওঠায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বয়স নিয়ে আইনের ব্যত্যয় হলে বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখবে।’বরিশালে সনদ সংগ্রহ এবং তালিকায় নাম রাখা নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে বাবুগঞ্জ উপজেলায়। বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মহিউদ্দিন মানিক প্রথম আলোকে বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।বাবুগঞ্জ উপজেলার মহিষাদী গ্রামের আলেয়া বেগম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামী মোসলেম আলী হাওলাদার মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মো. কাঞ্চন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সনদ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একই অভিযোগ করেন মো. হাকিম আলী।বরিশাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাবুগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অংশ অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আবার যাচাই-বাছাই কমিটিও অনেক স্থানে রাজনৈতিকভাবে করা হয়েছে। তবে জাল সনদ নিয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য এসেছিলেন। তাঁরা বাদ পড়েছেন।বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থ লেনদেন হয়েছে এটা দ্বিমত করি না। শুনেছি লোকে গরু, জমি বেচে এবং সুদে ঋণ নিয়েও নাকি টাকা দিয়েছে।’
যাচাই-বাছাই শেষে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বগুড়ার শেরপুরে বেশির ভাগের নাম বাদ দেওয়ার সুপারিশ করায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানেরা বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ পড়া তালিকায় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান ও বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়ার সহকারী পরিচালক আবদুর রউফ খানও রয়েছেন।এ প্রসঙ্গে মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পাকিস্তান আমলে তিনি শেরপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৭০ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়ার সহকারী পরিচালক আবদুর রউফ খান বলেন, তিনি ছিলেন ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। সরকারি গেজেটভুক্ত এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সনদপ্রাপ্ত ছিলেন। তাঁকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় তিন দফা কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে
৪। দোহারে অনিয়মের অভিযোঃ মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই–বাছাই স্থগিত
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
ঢাকার দোহার উপজেলায় অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে গত সোমবার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা যাচাই-বাছাই কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বশেষ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই এবং গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলাকালে অনলাইনে প্রায় আড়াই হাজার ফরম পূরণ হয়। এ নিয়ে দোহার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাংশের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম সোমবার অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত আবেদন দেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করার জন্য যে কমিটি করা হয়েছে, সেটা সঠিকভাবে করা হয়নি। তা ছাড়া যে প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, তাতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই বাদ পড়ে যাবেন। প্রতিটি ইউনিয়নের পাঁচ-সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে কমিটিতে রাখা হলে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার অনিয়ম দূর হবে এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাই তালিকায় চলে আসবেন। যাচাই-বাছাই কমিটির বিশেষজ্ঞ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনজুর এ এলাহী মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও সুবিধাভোগী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ৫০৭ জন। আর গেজেটভুক্ত রয়েছেন ৫৬১ জন। এ ছাড়া লাল বইয়ে তালিকাভুক্ত রয়েছেন ২৯৪ জন। তবে কী কারণে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে এবং কবে থেকে আবার এ প্রক্রিয়া শুরু হবে সে বিষয়ে আমি অবগত নই।’ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নে (নয়াবাড়ি, মাহমুদপুর, বিলাসপুর, কুসুমহাটি ও রাইপাড়া) মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া গত ৩০ জানুয়ারি পৌরসভা ও সুতারপাড়া ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের দিন ধার্য ছিল। সেদিন যাচাই-বাছাই না হওয়ায় কমিটি বাতিলের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে ইউএনও বরাবর দেওয়া অভিযোগে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়। উপজেলার ডেপুটি কমান্ডার মো. শাহাজাহান বলেন, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নের যাচাই-বাছাই শেষ হয়েছে। বাকি ইউনিয়নের যাচাই-বাছাইয়ের তারিখ কয়েক দিনের মধ্যে জানানো হবে। যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য কমান্ডার আবুল কালাম বলেন, ফরম ক্রেতাদের বেশির ভাগই অপরিচিত মুখ। কমিটির আরেক সদস্য বর্তমান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. রজ্জব আলী মোল্লা বলেন, ফরম নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করা হবে। ইউএনও কে এম আল আমীন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। বর্তমানে যাচাই-বাছাই স্থগিত আছে।’
৫। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই–বাছাই নিয়ে জগাখিচুড়ি
রোজিনা ইসলাম ৩০ জানুয়ারি ২০১৭
📷.মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আর কে ভুয়া, নতুন করে কারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন, সেটা যাঁরা যাচাই-বাছাই করছেন তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে উঠেছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অভিযোগ। সারা দেশ থেকে চিঠি, ফ্যাক্স ও ই-মেইলে এসব অভিযোগ আসতে থাকায় যাচাই-বাছাই কমিটিগুলো দফায় দফায় সংশোধন করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত কয়েক দিনে ৩৫টি জেলার ৪৫টি উপজেলার কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে পাঁচটি কমিটি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে। এরই মধ্যে শতাধিক উপজেলায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে দাবি করেছেন, যাচাই-বাছাই কমিটির ওই সদস্যদের সত্যিকার পরিচয় যাচাই-বাছাই করা উচিত। কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা সাধারণ মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম তুলে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, এত বিপুলসংখ্যক কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসা বিস্ময়কর।
মুক্তিযোদ্ধার পুরোনো তালিকায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এবং যাঁরা নতুন করে সনদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদের ব্যাপারে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১২ জানুয়ারি একটি গেজেট প্রকাশ করে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য অনলাইনে জমা পড়েছে প্রায় দেড় লাখ আবেদন। এ ছাড়া প্রতিদিনই আবেদন আসছে। সারা দেশে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৪৮৮টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি কাজ শুরু করে ২১ জানুয়ারি থেকে।
সাম্প্রতিক কয়েকটি অভিযোগ
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটির ফরহাদ হোসেন ও আবু তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাতে তাঁরা বলেছেন, এ দুজন এলাকার নিরীহ লোকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ভুয়া নাম তোলার আশ্বাস দিচ্ছেন।
তবে ফরহাদ হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি গতকাল রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে হেয় করার জন্য এসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। পারলে অভিযোগ প্রমাণ করুক।’ অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তের জন্য একজন মন্ত্রীও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছেন। সাতকানিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটি থেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবু তাহের, ডেপুটি কমান্ডার মিলন কুমার ভট্টাচার্য, নুরুল আলম মন্টু ও নাছির উদ্দিনকে বাদ দিয়ে নতুনভাবে ‘প্রকৃত’ মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্তির দাবি তুলেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু তাহের পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘হাফেজ আহমদ, নুরুল ইসলামসহ যাঁরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাঁরাই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আমাকে কমিটি থেকে সরাতে পারলে তাঁরা সরকারি ভাতা চালুসহ যাচাই-বাছাইয়ের সময় প্রভাব দেখাতে পারবেন এই আশায় ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ওনারা বাদ পড়ার ভয়ে কমিটি থেকে আমাকে সরানোর জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’ উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক হাফেজ আহমদ অভিযোগ করেন, ‘তালিকায় নাম তোলার কথা বলে সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের আবেদনকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন।’ একই অভিযোগ এসেছে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার যাচাই-বাছাই কমিটির সুলতান আহম্মেদ হাওলাদার ও মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে। সুলতান আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চলছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে অভিযোগকারী নজরুল হক জমাদ্দারের দাবি, সুলতান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। এ বিষয়ে তাঁদের কাছে প্রমাণ আছে। একইভাবে মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা লিখিত অভিযোগ করেছেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের যে প্রতিনিধি যাচাই-বাছাই কমিটিতে দেওয়া হয়েছে, সেই খলিলুর রহমান নিজেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। বিগত সরকারের আমলে তিনি ভুল তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন। তাই তাঁর সনদ আগে যাচাই-বাছাইয়ের অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। নরসিংদীর পলাশ উপজেলার কমিটি থেকে মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান মিয়াকে বাদ দেওয়ার আবেদন এসেছে। এতে বলা হয়েছে, তিনি শতাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকায় তোলার সুপারিশ করেছেন।
রাউজানে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের কারও কারও লাল মুক্তি বার্তা এবং ভারতীয় তালিকায় নাম না থাকার অভিযোগ উঠেছে। ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলা কমিটিতে বাইরের উপজেলা থেকে একজনকে সদস্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ফরিদপুরের উপজেলা কমান্ডার গফফার মিয়া। অভিযোগ উঠেছে, নড়াইল জেলার যাচাই-বাছাই কমিটির জামুকা প্রতিনিধি মো. লিয়াকত হোসেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। তিনি অর্থের বিনিময়ে অনেক অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস। শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে যাচাই-বাছাই কমিটি থেকে বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাহাব উদ্দিনের নাম বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সেখানকার মুক্তিযোদ্ধারা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাহাব উদ্দিন ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছিলেন। জানতে চাইলে সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। শত্রুতা করে সবাই এসব করছে।’
বেশ কয়েকটি কমিটি পুনর্গঠন
গত কয়েক দিনে ৩৫টি জেলার ৪৫টি উপজেলার কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি কমিটি স্থগিতও করা হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, দেড় বছর আগে একবার কমিটি করা হয়েছিল। এরপর কিছু কমিটি নতুন করে করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে কারও সুপারিশে কোনো কমিটি করা হয়নি। তবে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। তারপরও যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাঁদের বাদ দিয়ে সংশোধিত কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো কোনো কমিটি বাতিলও করা হয়েছে।
৬। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা নেই ১২ এপ্রিল ২০১৭
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় আইনগত বাধা কেটেছে। এ বিষয়ে দেওয়া আদেশ সংশোধন করে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি এম ফারুকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের করা সংশোধন আবেদনের শুনানি নিয়ে আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ আর এম হাসানুজ্জামান। অন্যদিকে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম সাইফুল বারী ও আইনজীবী আব্দুল মান্নান। পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এ আর এম হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ১৯ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে ৪৭০টি কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের ওই স্মারকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দুটি উপজেলা কমিটি গঠন নিয়ে হাইকোর্টে পৃথক রিট হয়। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ মন্ত্রণালয় পুরো স্মারকের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেন। একটি মামলা শুনানিতে গত সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মার্চের একটি স্মারক নজরে এলে আদালত বলেন, পুরো স্মারক স্থগিত করা হয়নি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ আগে দেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ সংশোধন চেয়ে আবেদন করে। হাসানুজ্জামান বলেন, হাইকোর্ট একটিতে (ফরিদপুর উপজেলা) রুল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে ৪৭০ টির ক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলো। অপরটিতে (টুঙ্গিপাড়া) স্থগিতাদেশ বহাল রেখে আদেশ সংশোধন করে দিয়েছেন, শুধু টুঙ্গিপাড়া হবে। ফলে টুঙ্গিপাড়া ছাড়া বাকি যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম পরিচালনায় আইনগত কোনো বাধা নেই। আইনজীবী সূত্র বলেছে, ৪৫৯টি উপজেলা কমিটি, তিনটি জেলা কমিটি ও আটটি মহানগর কমিটি (৪৭০ টি) পুনর্গঠন করে গত ১৯ জানুয়ারি আদেশ জারি করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। যথাযথভাবে কমিটি গঠন করা হয়নি উল্লেখ করে রিট (১০২৭ / ২০১৭) করেন ফরিদপুরের একটি উপজেলা নিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধা। আর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নিয়ে অপর রিটটি (১১০৮ / ২০১৭) করেন আরেক মুক্তিযোদ্ধা। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ জানুয়ারি ও ২৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ চার মাসের জন্য কার্যক্রম পরিচালনায় স্থগিতাদেশ দেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক আদেশে গত ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির ওই কার্যক্রম স্থগিত করে। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে দুটি আবেদন করে, শুনানি নিয়ে ৩০ মার্চ আদালত হাইকোর্টে রুল শুনানি করতে বলেন। এর ধারাবাহিকতায় রুল শুনানির জন্য ওঠে। এ দিকে আপিল বিভাগের আদেশের কপি পাওয়া যায়নি জানিয়ে ৫ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপজেলা বা জেলা বা মহানগর যাচাই-বাছাই সকল (৪৭০ টি) কমিটির কার্যক্রম স্থগিত রাখা হল। ১১০৮ নম্বর রিট মামলায় আট জেলা এবং ১০২৭ নম্বর রিট মামলায় সকল (৪৭০ টি) যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয় বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
৭। মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলবে ২০ মার্চ ২০১৭
মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম চলবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের করা রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ঝালকাঠি ও সিলেটের যাচাই-বাছাই কমিটি স্থগিত করে। পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ২৯ জানুয়ারি ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিন্ন ভিন্ন প্রজ্ঞাপন দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম স্থগিত করে। মন্ত্রণালয় জানায়, ১৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের ২৯ জানুয়ারির আদেশে অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ প্রদান করেছে। এ অবস্থায় অন্য কোনো মামলা বা রিট পিটিশনের আদেশ দ্বারা স্থগিতাদেশ না থাকলে উপজেলা, জেলা মহানগর যাচাই বাছাই কার্যক্রম চলবে। মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাইয়ের জন্য মহানগর, জেলা ও উপজেলায় কমিটি করতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ১২ জানুয়ারি একটি গেজেট প্রকাশ করে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাই বাছাইয়ের বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল গত বছরের ১০ ডিসেম্বর একটি নির্দেশিকা জারি করে। পরে গত ৫ জানুয়ারি আরেকটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাছাইয়ের তারিখ পরিবর্তন করা হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি আট জেলার জন্য যাচাই বাছাই কমিটি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়।
৮। আজ জামুকার সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বয়স নয়, তথ্য যাচাই করেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণ ০৭ জানুয়ারি ২০১৫
বয়স দিয়ে নয়, আবেদনসহ সব তথ্য যাচাই করেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আজ বুধবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে বয়স ১৩ বা ১৫ বছরের নিচে ছিল—এমন কেউ মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবেন না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কম বয়সীদের মধ্যেও অনেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এ জন্য বয়স নয়, যেকোনো আবেদন উপজেলা ও মহানগর কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের পর ওই ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা কি না, তা নির্ধারণ করা হবে। মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য অনলাইনে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫৪টি এবং সরাসরি ১০ হাজার ৯০০টি আবেদন জমা হয়েছে। আবেদনে উপজেলা বা জেলার নাম উল্লেখ করা হয়নি, এমন আবেদন পাওয়া গেছে ৫ হাজার ৫৫৩টি। সারা দেশে উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ৪৮৮টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি গঠন করা হবে। যাচাই-বাছাইসহ স্থায়ী মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়ার কাজ চলতি বছরের ২৬ মার্চ শেষ হবে। সূত্র জানায়, জামুকার ২৫তম সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, একাত্তরে বয়স ১৫ বছরের নিচে ছিল, এমন কেউ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির আবেদন করতে পারবেন না। তারপর এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠনের আপত্তি মন্ত্রণালয়ে আসতে থাকে। এ প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয় একাত্তরে যাঁদের বয়স ১৩ বছরের নিচে ছিল, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা নন—এমন বিধান রেখে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা করে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৩ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা অত্যন্ত সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর বিষয়। তথাপি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নিরূপণের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা জরুরি। মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ নীতিনির্ধারণী বিষয় হওয়ায় জামুকা আইন, ২০০২ অনুযায়ী জামুকার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নির্ধারণ করতে বলেছেন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উপজেলায় আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান হবেন স্থানীয় সাংসদ। কমিটিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি, জেলা কমান্ডার বা তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি, উপজেলা কমান্ডার, যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, জামুকার সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকবেন। তবে কমিটির সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা হতে হবে। সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা না হলে মন্ত্রণালয় ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে একজন প্রতিনিধি দেবে। মহানগরে সভাপতি হবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। সদস্য থাকবেন আরও পাঁচজন। যাচাই-বাছাইয়ের সময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত থাকবেন। আবেদনকারী বা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কেউ আপত্তি জানালে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি কোথায়, কার অধীনে, কী কী অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। নারী মুক্তিযোদ্ধাদের (বীরাঙ্গনা) তালিকা হবে ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে যাঁরা নবম, দশম শ্রেণির ছাত্র বা এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন, তাঁদের প্রকৃত বয়স তখন যথাক্রমে ১৫ থেকে ১৭ বছর হলেও নিবন্ধনে বয়স প্রকৃত বয়সের চেয়ে দুই থেকে তিন বছর কম দেখানো হয়। ফলে একাত্তরের ২৬ মার্চ যেসব ছাত্রের প্রকৃত বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছর ছিল, তাঁদের এসএসসির সনদ অনুসারে তখন বয়স ছিল ১৩ বা ১৪ বছর। এ ছাড়া ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী অনেক কিশোর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের মুক্তিযোদ্ধা/যুব শিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। নারী মুক্তিযোদ্ধা: নতুন সংজ্ঞায় মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনী এবং রাজাকারদের নির্যাতনের শিকার নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, যাঁদের এত দিন বীরাঙ্গনা বলা হতো। এঁদের সংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। তাঁদের আলাদা তালিকা হবে। অন্য মুক্তিযোদ্ধারা যেসব সুযোগ-সুবিধা পান, তাঁরাও তা পাবেন।
৯। ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধার বিবৃতি

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি নিয়ে বিবৃতির প্রতিবাদ

চট্টগ্রাম ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
চট্টগ্রাম নগরের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি নিয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার যৌথ বিবৃতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। সম্প্রতি ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম নগরের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা দিয়ে গঠিত হয়েছে। ১১ জন মুক্তিযোদ্ধার ওই বিবৃতিকে মিথ্যা, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিহিত করে ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘অভিযোগকারীদের মধ্যে এমন কেউ কেউ আছেন যাঁরা বিগত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে বর্তমান মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বাধীন প্যানেলের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। তাঁদের অনেকেই অতীতে ফ্রিডম পার্টি ও বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। এতেই বোঝা যায়, প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তাঁরা এ ধরনের কাল্পনিক অভিযোগ করে যাচাই-বাছাই কমিটিকে বিব্রত করেছেন, যা অনভিপ্রেত।’ বিবৃতিতে অন্যান্যের মধ্যে স্বাক্ষর করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মো. ইলিয়াছ, মো. মহসিন, ছৈয়দ মো. এমরান রফিকুল ইসলাম।
১০। মুক্তিযোদ্ধা বাছাই কমিটি নিয়ে দুই জেলায় ক্ষোভ পটুয়াখালী ও বান্দরবান ২৫ জানুয়ারি ২০১৭
পটুয়াখালীর গলাচিপা ও বান্দরবানে জেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে গলাচিপায় বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আর বান্দরবানে বাইরের মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে জেলার স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীর গলাচিপায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। তবে সেখানে বিতর্কিত লোকজন নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে অভিযোগ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, এ কমিটির সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা নন—এমন ব্যক্তিরা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ কমিটি’ নামে পৃথক একটি কমিটি গঠন করেছেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সভায় উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কালাম মোহাম্মদ ঈসাকে আহ্বায়ক করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। মোহাম্মদ ঈসা অভিযোগ করেন, এই উপজেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ২৪ জন। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে ৪১ জন অমুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হন। বর্তমানে আরও ২৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার আবেদন করেছেন। যাঁদের বাছাই কমিটিতে রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লা আল বাকী বলেন, ‘বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন। বাছাই কমিটি গঠনে আমাদের কিছু করার নেই।’বান্দরবানে ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিলের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের কমান্ডার আবুল কাশেম চৌধুরীসহ যাচাই-বাছাই কমিটির নয়জনকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অভিহিত করে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে নতুন আবেদনকারী এবং মুক্তিযুদ্ধ না করেও যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁরাই যাচাই-বাছাইয়ে টিকতে পারবেন না আশঙ্কায় গোলমাল পাকাচ্ছেন।জেলা প্রশাসক কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এ জেলায় ৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পান। এবার আরও প্রায় ১০০ জন এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেছেন।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে বান্দরবানের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাবেক উপসচিব আবদুল ওহাব বলেন, জেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৫-৩০ জনের বেশি হওয়ার কথা নয়। তালিকাভুক্তি স্থানান্তরের দাপ্তরিক কোনো দলিলপত্র ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে এ জেলায় এসে অনেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
১১। সাক্ষাৎকার : মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আবেদন দেড় লাখ হলেও পাঁচ হাজারের বেশি নতুন মুক্তিযোদ্ধা হবে না
মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করতে গত ১২ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গঠন করা হয় ৪৮৮টি উপজেলা ও ৮টি মহানগর কমিটি। এই কমিটি কাজ শুরু করে গত ২১ জানুয়ারি। কোথাও কোথাও এই কমিটিতে পরিবর্তন আনছে মন্ত্রণালয়। কারণ, একাধিক কমিটির বিরুদ্ধেই অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। কমিটিতে অমুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন—এমন অভিযোগও কারও কারও। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য এরই মধ্যে অনলাইনে জমা পড়েছে প্রায় দেড় লাখ আবেদন। এ ছাড়া প্রতিদিনই আবেদন আসছে। সার্বিক বিষয়ে গতকাল বুধবার প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রোজিনা ইসলাম
প্রথম আলো: মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। আপনি কি মনে করেন সেই কমিটি দিয়ে নতুন তালিকায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে?
মোজাম্মেল হক : মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তো আর কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা নেননি। তাহলে তো মামলা হতো। নিজেদের সুবিধার জন্য স্বেচ্ছায় লোকে টাকা দিয়েছেন। আর যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁরা সবাই অমুক্তিযোদ্ধা। আর অমুক্তিযোদ্ধাদের কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ নেই। কমান্ডার বা যিনি অভিযুক্ত, তিনি যাচাই-বাছাই কমিটির সাতজনের মধ্যে একজন সদস্য। আর প্রত্যেক আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার হচ্ছে উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ সবার সামনে। এর মধ্যে উপস্থিত একজন ব্যক্তিও যদি আপত্তি তোলেন, তবে অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা। তাঁকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি কোথায় যুদ্ধ করেছেন, কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁর কমান্ডার কে ছিলেন? তাঁর সহযোদ্ধা কে ছিলেন? কার নেতৃত্বে যুদ্ধ—এ ধরনের জবাব সঠিকভাবে দিয়ে কমিটি ও উপস্থিতদের সন্তুষ্ট করতে পারলেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। প্রথম আলো: নতুনভাবে দেড় লাখ ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কতজন নতুন মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন? মোজাম্মেল হক : পাঁচ হাজারের বেশি নতুন হবে বলে আমার মনে হয় না। প্রথম আলো: দফায় দফায় কমিটি বদল করা হচ্ছে কেন? মোজাম্মেল হক: দেড় বছর আগে একবার কমিটি করা হয়েছিল। এরপর কিছু কমিটি নতুন করে করা হয়েছে। সারা দেশ থেকে কারও সুপারিশে কোনো কমিটি করা হয়নি। তবে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। তারপরও যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, তাঁদের বাদ দিয়ে সংশোধিত কমিটি প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো কোনো কমিটি বাতিলও করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে কমিটিতে অন্য উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ঢুকে গেছে। তাই এসব সংশোধন করতে হয়েছে। প্রথম আলো: যাচাই-বাছাই কবে শেষ হবে? কীভাবে যাচাই-বাছাই করে তালিকায় নতুন মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত করবেন? মোজাম্মেল হক: ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ যাচাই-বাছাই শেষ হবে। সে হিসাবে ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সারা বাংলাদেশের প্রতিবেদন আসবে। ইতিমধ্যে আমাদের কাছে প্রতিবেদন আসা শুরু হয়েছে। যেসব প্রতিবেদন আমাদের কাছে পাঠানো হবে, উপজেলা অফিসে তার নামের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হবে। যদি কেউ বাদ পড়ে যান, তবে মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পারবেন কে বাদ পড়ে গেলেন। প্রথম আলো: দু-একটি প্রতিবেদন এসেছে, তাতে কতজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন? মোজাম্মেল হক: অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের কাছে যে তথ্য এসেছে, তাতে বেশির ভাগ থানাতেই ২০০ জন যেখানে আবেদন করেছেন, সেখানে দু-তিনজনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা গেছে। এর মধ্যে অনেকেই দু-তিনবার আবেদন করেছেন। এমনও আছে, ভারতীয় তালিকায় ও মুক্তিবার্তায় নাম থাকার পরও আবেদন করেছেন। কিন্তু তাঁদের দরকার ছিল না আবেদন করার। প্রথম আলো: আপিলের সুযোগ থাকবে কি? মোজাম্মেল হক: যাঁরা মনে করবেন ন্যায়বিচার পাননি, তাঁরা অবশ্যই আপিল করতে পারবেন। এ ছাড়া কমিটি মুক্তিযোদ্ধা করার পর যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবেন। এটা পুনরায় যাচাই-বাছাই হবে। প্রথম আলো: অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? মোজাম্মেল হক: সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছে—এমন প্রমাণিত হলে তিন বছর জেল হবে। প্রথম আলো: প্রবাসে যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকেই আবেদন করতে পারেননি। তাঁদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? মোজাম্মেল হক: যাঁরা বিদেশে অবস্থান করছেন, তাঁদের আগামী মার্চ মাসে ফরম পাঠানো হবে। ওখান থেকে হাইকমিশনের মাধ্যমে ফরম পূরণ করে পাঠানো হবে। প্রথম আলো: মুক্তিযোদ্ধাদের ডিজিটাল কোডসংবলিত সার্টিফিকেট ও আইডি কার্ড দেওয়ার কত দূর? মোজাম্মেল হক:আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা সম্পন্ন করে তাঁদের হাতে সনদ ও পরিচয়পত্র তুলে দেওয়া হবে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটা তৈরি করা হচ্ছে। টাকা জাল করা সম্ভব হলেও এ সনদ জাল করা সম্ভব হবে না। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আট ধরনের ডিজিটাল কোডসংবলিত সার্টিফিকেটের নমুনা প্রস্তুত করা হয়েছে।

Friday, September 25, 2015

মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের বক্তব্য

come to mukthi and learn the truth

মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের বক্তব্য

Picture

আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ হতে গণহত্যা শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। আইনের পরিভাষায় ’জেনোসাইড’ বলতে কেবল মাত্র কোন জনপদে হত্যাযজ্ঞ সংগঠনের অপরাধকেই বোঝায়না, বরং কোন জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র পরিচিতি ও প্রকৃতি বলপূর্বক পরিবর্তন করার উদ্দেশ্য নিয়ে ওই জনসমষ্টির জানমাল ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতিসাধনের সাথে সাথে তার নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সংস্কৃতি উপর যে কোন সুপরিকল্পিত হামলা গণহত্যার সংজ্ঞার আওতাভুক্ত।
যে কোন জনপদে যে কোন সশস্ত্র সংঘর্ষের অনিবার্য্য পরিণতি হিসেবেই জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এ সব ক্ষেত্রে যুদ্ধের নিয়ম বহির্ভূত ভাবে যারা নরহত্যা, ধর্ষণ, সম্পত্তি ধ্বংস ইত্যাদি মারাত্মক অপরাধ করে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তাদের বিচার ও শান্তি হয়। কিন্তু এই ধ্বংসযজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য যদি হয় সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য সমূহ বিনষ্ট করে দেওয়া, এবং সংঘটিত ধ্বংসযজ্ঞ যদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে সম্পাদন করা হয়, তবেই তা গণহত্যার অপরাধহিসেবে বিবেচিত হয়। এ সব ক্ষেত্রে যারা সরাসরি ধ্বংসযজ্ঞে অংমগ্রহণ করে শুধু তারাই নয়, বরং এই ধ্বংসযজ্ঞে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন প্রদানকারীরাও অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হয়। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে ইহুদী ধর্ম সম্প্রদায়কি হত্যাকারী জার্মানদের বিচারের সময় কেবলমাত্র ধ্বংসযজ্ঞের সাথে সরাসরি জড়িতদেরই বিচার হয়নি, বরং নাজী গণহত্যাযজ্ঞের প্রতি নৈতিক সমর্থন দানকারীদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়েছিল।
যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচাররর ক্ষেত্রে বিশেষ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। যেহেতু ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সময় সংঘঠিত প্রতিটি অপরাধ স্বতন্ত্র হতে বাধ্য সে জন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া স্বভাবিক কারণেই সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে শাস্তি প্রদানের জন্য ভুক্তভোগীর সাক্ষ্যের সাথে অভিযুক্তের অপরাধ সংঘঠনকারী সংস্থার সাথে যুক্ত থাকা এবং অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার সময় অকুস্থলে বা কাছাকাছি উপস্থিত থাকার বিষয়টি সমান গুরুত্ব লাভ করে। হিটলারের সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী নাজী পার্টির সমস্ত সদস্যকে শুধুমাত্র ওই পার্টির সদস্য হওয়ার কারণেই শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনী এ দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় সমগ্র বাংলাদেশে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, যে কোন বিচারেই তা ছিল একটি নজীরবিহীন গণহত্যা।
যদিও গণহত্যার মত অপরাধ মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই সংঘটিত হয়েছে, তবু গণহত্যার আন্তজাতিক ভাবে প্রয়োগ যোগ্য সংজ্ঞা প্রদান এবং গণহত্যা যেহেতু সমগ্র মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, সেহেতু গণহত্যার অপরাধের বিচার ও শাস্তি প্রদান আন্তর্জাতিক বিবেচনার ব্যাপার- এই বিশ্বজনীন সাধারন নীতির প্রচলন করা হয় মূলতঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জার্মানীর পরাজয়ের পর ১৯৪৫ সালের ৩১ মে রয়্যাল কোর্ট অব জাস্টিস হলে যুদ্ধাপরাধ কমিশনের সদস্য রাষ্ট্রগুলির এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যার লর্ড রাইট বলেন:
"... ... নাজী অথবা ফ্যাসিবাদী অপরাধের বৈশিষ্ট্য হল যে, সমগ্র যুদ্ধ এলাকার ও অধিকৃত এলাকায় তারা যে শুধু ব্যাপক ভাবে অপরাধই করেছে তাই নয়, তারা দেখিয়ে দিয়েছে যে, এর পেছনে ছিল ব্যাপক একটা পরিকল্পনা; এসব এসেছে একজন দুর্ধর্ষ অপরাধী ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের মস্তিষ্ক থেকে এবং এসব পরিকল্পনা কার্যকর হয়েছে, বিস্তৃত হয়েছে, সুসংগঠিত প্রতিনিধি ও কৌশলের মাধ্যমে; এর অর্থ প্রত্যেকে কাজ করেছে একটি নির্দেশে, একটি সূত্রে।"
ওই বছর ৮ আগষ্ট, নেতৃস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচরের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এই ট্রাইব্যুনালের কার্যপ্রণালী বিধিতে ছিল মোট ৩০ টি অনুচ্ছেদ।
ষষ্ঠ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল যে, ইউরোপীয় অক্ষশক্তির দেশগুলোর প্রয়োজনে যে ব্যক্তিগতভাবে অথবা কোন প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসাবে কাজ করেছে এবং নিম্নে লিখিত অপরাধগুলো করেছে তার বিচার ও শাস্তি দেয়ার অধিকার এই ট্রাইব্যুনারের থাকবে :
(ক) শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ- যথা, যুদ্ধ সূচনা বা প্রস্তুতি পরিকল্পনা অর্থাৎ আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন অথবা উল্লিখিত সে কোনটা করার জন্য সাধারণ পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ অথবা ষড়যন্ত্র করা।
(খ) যুদ্ধাপরাধ- যথা, যুদ্ধের আইন অথবা প্রথা ভঙ্গ করা। এতে যুক্ত হবে, কিন্তু এর মধ্যেই সীমিত নয়, অধিকৃত এলাকায় বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা, দুর্ব্যবহার অথবা ক্রীতদাসের মত শ্রমে বা অন্যকাজে নিয়োগ করা, যুদ্ধবন্দীদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা অথবা নাবিকদের প্র্রতি অত্যাচার অথবা সামরিক প্রয়োজনের দ্বরা সমর্থিত নয় এমন সরকারী ও বেসরকারী সম্পত্তি বিনষ্টকরন ও ইচ্ছাকৃতভাবে শহর, নগর ও গ্রামের ধ্বংস সাধন।
(গ) মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ - যথা, যুদ্ধের সময় বা আগে কোন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা, বিলুপ্ত করা, ক্রীতদাস করা বা অন্যান্য অমানবিক কাজ ; অথবা রাজনৈতিক, গোষ্ঠীগত ও ধর্মীয় কারনে বিচার।
উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে নাজী যুদ্ধাপরাধীদের ইতিহাসখ্যাত ন্যুরেমবার্গ বিচার শুরু হয় ১৯৪৫ সালের নভেম্বর মাসে। ১ অক্টোবর ১৯৪৬ পর্যন্ত এই বিচার কাজ চালিয়ে মাত্র ১১ মাস সময়ে মূল যুদ্ধপরাধীদের বিচারের কাজ শেষ করা হয়। অপরাধীদের শাস্তি অবিলম্বে কার্যকর করা হয়।
এই বিচারের পর ট্রাইব্যুনালের নীতিমালা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আলোচিত হয় এবং ভবিষ্যতের রক্ষাকবচ হিসেবে ন্যুরেমবার্গ বিচারকে আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে গ্রহণের বিষয়টি বিবেচিত হয়। তদনুযায়ী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৫৫ তম সভায় ১১ ডিসেম্বর, ১৯৪৬ তারিখের ৯১ (১) সংখ্যক নিম্নলিখিত প্রস্তাবটি সর্বসম্মত ভাবে গৃহীত হয়ঃ
’হত্যা যেমন ব্যক্তিগত অস্তিত্ত্ব রক্ষার অধিকার লংঘন করে তেমনি গণহত্যাও একটি মানব গোষ্ঠীর বাঁচার অধিকার লংঘন করে। এ ধরনের অধিকার লংঘন মানব চেতনাকে আহত করে, এর ফলে মানব সমাজ ঐ মানব গোষ্ঠীর কৃষ্টি বা ঐজাতীয় অন্যান্য অবদান থেকে বঞ্চিত হয় এবং তা জাতিসংঘের লক্ষ্য ও মূলনীতি এবং নৈতিক আইনের পরিপন্থী।
এ ধরনের বহু গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে যখন গোত্রগত, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে অংশত বা পূর্নতঃ ধ্বংস করা হয়েছে।
গণহত্যার শাস্তি প্রদান একটি আন্তর্জাতিক বিবেচনার ব্যাপার।
একই সভায় পরিষদ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক সামাজিক কাউন্সিলকে একটি খসড়া আইন প্রণয়নের অনুরোধ জানায়। তদনুযায়ী ষষ্ঠ কমিটি খসড়া প্রণয়ন করে এবং ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদে এ’টি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সম্পাদত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হিসেবে গৃহীত হয়।
চুক্তির মূল বক্তব্য :
চুক্তিবদ্ধ দলগুলো ১১ ডিসেম্বর ১৯৪৬, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৯১ (১) প্রস্তাবে ঘোষণা করে - 'গণহত্যা আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ, জাতিসংঘের লক্ষ্য ও মূল নীতির পরিপন্থী এবং সভ্য জগৎ এটাকে নিন্দা করছে ও মনে করছে:
ইতিহাসের সব পর্যায়ে গণহত্যা মানব সমাজে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। তারা আরো মনে করে, মানুষকে এ ধরনের জঘন্য যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। নিম্নে যা লেখা হলো তাতে তারা স্বাক্ষর দান করছে-
ধারা- ১। চুক্তিবদ্ধ দলগুলো সত্য বলে স্বীকার করে যে, গণহত্যা শাস্তি অথবা যুদ্ধ যে কোন সময় সংঘটিত হোক না কেন, আন্তর্জাতিক আইনে তা অপরাধ, যা রোধ ও শাস্তি দানের প্রতিশ্রুতি তারা দিচ্ছে।
ধারা- ২। বর্তমান চুক্তিতে গণহত্যার অর্থ নিম্নলিখিত যে কোন কাজগুলো, অংশত বা পূর্ণতঃ, কোন জাতীয়, গোত্রহত, গোষ্ঠীগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘঠিত হওয়া। যেমন:
ক। দলের সদস্যকে হত্যা করা,
খ। দলের সদস্যদের দেহ অধবা মানসিক দিক থেকে গুরুতর ক্ষতি করা,
গ। ইচ্ছাকৃতভাবে অংশতঃ বা পূর্ণতঃ দৈহিক ধ্বংস সাধনের পরিপল্পনায় দলীয় জীবনে আঘাত হানা,
ঘ। দলের জন্মরোধ করার উদ্দেশ্যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ,
ঙ। বল প্রয়োগে এক দলের শিশুকে অন্য দলে সরানো।
ধারা- ৩: নিম্নলিখিত কাজগুলো শাস্তির যোগ্য
ক। গণহত্যা;
খ। গণহত্যা করার ষড়যন্ত্র;
গ। গণহত্যা করার জন্য প্রত্যক্ষ ও গণ উত্তেজনা সৃষ্টি,
ঘ। গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকা।

ধারা- ৪ : যে সব ব্যক্তি গণহত্যা করবে বা ৩ নম্বর ধারায় বর্ণিত কাজগুলোর যে কোনটি করবে, সে শাসনতান্ত্রিক মতে শাসক, সরকারী কর্মচারী বা ব্যক্তি যেই হোক না কেন, তাকে শাস্তি পেতে হবে।
ধারা- ৫ : চুক্তিতে স্বাক্ষর দানকারী দলগুলো এই আশ্বাস দিচ্ছে সে, তাদের স্ব-স্ব শাসনতন্ত্র অনুযায়ী এই চুক্তিকে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন তৈরী করবে, বিশেষতঃ, যে সব ব্যক্তি গণহত্যার অপরাধে অপরাধী বা তৃতীয় ধারায় বর্ণিত কাজগুলোর যে কোন একটা করার জন্য দোষী বলে বিবেচিত হবে, তাদের শাস্তিদানের ব্যবস্থা করবে।’
গণহত্যার উপরোক্ত বিশ্বজনীন সংজ্ঞার আলোকে বিচার করলে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে যে নজীর বিহীন হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে তার সাথে জড়িত প্রত্যেকটি পাকিস্তানী সেনা এবং তাদের এদেশীয় দোসর শাস্তি কমিটির সদস্য, রাজাকার, আলবদর, আলশামস সকলেই গণহত্যার অপরাধে অপরাধী।

বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ কেবলমাত্র স্বধীকারের দাবীতে পরিচালেত একটি ব্যাপক গণ আন্দোলনকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত আকষ্মিক শক্তি প্রয়োগ নয়, বরং তা ছিল বাঙারী জাতির নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ বিনষ্ট করার এক সুদুর প্রসারী পরিকল্পনার অংশ বিশেষ। ঠিক যেভাবে হিটলারের নাজী বাহিনী চেয়েছিল ইউরোপকে ইহুদীমুক্ত করতে এবং তাদের ভাষায় ইউরোপের ’নিম্নশ্রেণীর জাতিগুলোকে সেমিটিক রক্তে পরিশোধিত করতে, ’ তেমনি পাকিস্তানী বাহিনীরও উদ্দেশ্য ছিল- এদেশে বাঙালী জাতিসত্ত্বার চিন্তা চেতনাকে সমূলে উৎপাটন করে এই জনগোষ্ঠীকে তাদের অধীনস্থ দাস জাতিতে পরিণত করা।
১৯৭১ এর গণহত্যার সময় পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালদের ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনার জন্য প্রণীত পরিকল্পনার প্রকৃতি এবং সে সময় প্রদত্ত তাদের বিভিন্ন বিশিষ্ট বক্তব্য বিশ্লেষণী দৃষ্টি দিয়ে দেখলে এ’বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায়। এবিষয়ে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সূচিন্তিত, মতামত প্রণিধানযোগ্য। এখানে শুধু উদ্ধৃত করা হবে খোদ পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিকের বক্তব্য।
’৭১ - এর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পাক বাহিনীর শোচনীয় পরাজয়ের পর পরই ১৯৭২ সালের শুরুতে পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে সেদেশে সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করা হয়। ’ডিবেক্যাল কমিশন’ বা ’বিপর্যয় কমিশন’ নামে পরিচিত ওই কমিশনে সাক্ষ্য দানকারীদের অন্যতম ছিলেন পাকিস্তান তাহরিক-ই-ইশতিকলাল পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মালিক গোলাম জিলানী। তাঁর লিখিত স্বাক্ষ্যে তিনি বলেন, ’... ... বাস্তবিক পক্ষে, আমার প্রাপ্ত তথ্য ও বিশ্বাস অনুসারে (আমি বলতে পারি), যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অ্যাকশন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় – এবং এই সিদ্ধান্ত সাধারণভাবে সবাই যে রকম জানে বা বিশ্বাস করে থাকে, তার চেয়ে অনেক আগেই নেওয়া হয়েছিল- সেই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ছিল, যেভাবে কুখ্যাত আইখম্যান পরিকল্পনায় হিটলার ইহুদী জাতিকে নির্মূল করে ইহুদী সমস্যার চ’ড়ান্ত সমাধান করতে চেয়েছিল, সেই একই কায়দায় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র জনসমষ্টিকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা। এটি ছিল বিকৃত মস্তিষ্কজাত, চরম পৈশাচিক এক ষড়যন্ত্র, যা পাকিস্তানের জন্য লজ্জা ও কলঙ্কের কারণ হতো, এবং এটা তা’ই বয়ে নিয়ে এসেছে।’(দৈনিক মর্নিং নিউজ ২৮ নভেম্বর ’৭৩) বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ যে নাজী জার্মানীর ইহুদী হত্যালীলার চেয়েও ভয়াবহ ছিল সে বিষয়ে মালিক জিলানী তাঁর সাক্ষ্যের অপর একটি অংশে বলেন, ...... বস্তুতঃ আমি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ’হামলা’ করার জন্য ভারতের সমালোচনা তো করবই- না, বরং পাকিস্তানের নামকে এর রাজস্বসহ একচেটিয়া দখল করে নেওয়া মাতাল গুন্ডাদের একটি দলকে পদানত করার কাজে সাফল্যের জন্য আমি মিসেস ইন্তিরা গান্ধীকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমি ভারতের প্রধান মন্ত্রী হতাম, তাহলে আমি অনেক আগেই পদক্ষেপ নিতাম যাতে করে যে তিরিশ লক্ষ বাঙালীকে হিটলারের ইহুদী নিধনযজ্ঞের সময় থেকে সর্বঅধিক নৃশংসভাবে, ঘৃণাতম অপরাধীর মত, সর্বাধিক স্যাডিস্টিকভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের অন্ততঃ কয়েকজনকে বাঁচানো যেত। সরকার এবং এ সমস্ত নৃশংস ঘটনাবলীর জন্য যারা দায়ী সেই সামরিক বাহিনীরই বহু উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার কাছে ধর্ষণ বেং সম্ভ্রম লুন্ঠনের যে সমস্ত কাহিনী আমি শুনেছি, এবং এ’গুলিকে আমি আন্তরিকভাবে সত্য বলেই বিশ্বাস করি - সেগুলি এমনই নিষ্ঠুর যে নাজীরাও তাদের অধিকৃত এলাকার ধ্বংসযজ্ঞে কখনও তেমন নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেনি।’২। (দৈনিক মর্নিং নিউজ ২৮ নভেম্বর ’৭৩ )
সদ্য যুদ্ধে পরাস্ত, দেশের একটি অংশ হারিয়ে বিপর্যস্ত কোন জাতি, যা কিনা পরাজিত সেনা বাহিনীর দ্বারাই শাসিত হচ্ছে, তাদের সামনে ওই দেশেরই একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকের এই বক্তব্যই সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করে যে, বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা ছিল বাঙালী জাতিসত্ত্বাকে সমূলে উৎপাটন করার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিত এক ভয়াবহ ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ।
যদিও মানবতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত গণহত্যার অপরাধসমূহের আপেক্ষিক গুরুদ্ব নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার, তবু বাস্তব ঘটনার নিরিখে একথা বললে অত্যুক্তি হবেনা যে, বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ছিল সাম্প্রতিককালে বিশ্বের অন্যান্য স্থানে সংঘটিত
গলহত্যা সমূহ যেমন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যা, ভিয়েতনামে সংঘটিত গণহত্যা ইত্যাদির চেয়েও আরও বেশী হৃদয় বিদারক এবং ধ্বংসাত্মক। পূর্ববর্তী গণহত্যাযজ্ঞর ঘটনা সমূহে একটি দেশের সমগ্র শিক্ষিত শ্রেণীকে পরিকল্পিতভাবে নির্মূল করে দেওয়ার চক্রান্ত সংঘটিত হয়েছিল বলে জানা যায় না, যা হয়েছিলা আমাদের দেশে। বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার পর অভিযানে ’জেনোসাইড’ শব্দটির সাথে যুক্ত হয়েছিল নতুন একটি শব্দ, ’এলিটোসাইড’। মৃত মানুষের শরীর থেকে মাংস-অস্থি খুলে নিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে হাড়ের স্তুপ সাজানোর মত বর্ণনাতীত নৃশংসতা অন্য কোন দেশে প্রদর্শিত হয়েছে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আলবদর বাহিনী গেস্টাপো বাহিনীর চেয়ে অনেক বেশী নৃশংসতা প্রদর্শন করেছে। শান্তি কমিটির সদস্যরা নিঃসন্দে হে নাজি পার্টির সদস্যদের কৃত অপরাধের তুল্য অপরাধই করেছে।
গণহত্যার অপরাধের বিচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিবেচনার বিষয় হওয়া সত্বেও এবং এই বিচারের সপক্ষে জাতিসংঘ, বিশ্ব শান্তি পরিষদ, এ্যামনেস্চি ইন্টারন্যাশনাল, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ইত্যঅদি মানবাধিকার সংগঠন সমূহসহ সারা বিশ্বের জনমত সোচ্চার হলেও এদেশে যুদ্ধাপরাধী পাক সেনাদের বিচার হয়নি এবং তাদের সহায়তাকারী দালালদের বিচারের যে ব্যবস্থা করা হয়েছিল, অপরাধের প্রকৃতি ও গুরুত্বের বিচারে তা ছিল দুঃখজনক ভাবে অপ্রতুল।
গণহত্যার মতো অপরধের ক্ষমা হয় না কিংবা দেষীদের বিচারের সময়য়ও পেরিয়ে যায় না। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের আজও বিচার করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দেশের বাস্তব অবস্থার নিরিখে পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধী এবং এদেশীয় দালালদের যথাযথ বিচার করা বর্তমানে কিংবা ভবিষ্যতে হয়ত অত্যন্ত জটিল ও দুরুহ কাজ হবে কিন্তু জাতীয় ইতিহাসে পাকবাহিনীর দালালদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করে রাখার কাজটি মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক ইতিহাস রচনারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়া দালালদের চিহ্নিত করে এদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া স্তব্ধ করাও আমাদের দায়িত্ব।
মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের বিরোধিতা করেছে এবং পক্ষান্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের তালিকা প্রস্তুত করার দাবী জানিয়ে এসেছে। আমাদের বিশ্বাস এবং দায়িত্ববোধই একাত্তরের অপ্রকাশিত ইতিহাস সংকলন করে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন খন্ডে প্রকাশ করার প্রেরণা যুগিয়েছে। আমরা সকলের সহযোগিতা চাই।

১৯৭১ স্বাধীনতাপ্রাপ্তির বছর

come to mukthi and learn the truth
৭১ সাল জাতির স্বাধীনতা প্রাপ্তির বছর
৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষন মুক্তিযুদ্ধের সুচনা
২৬ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা
১৭ ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার ঘোষনা
৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনী
১৬ ই ডিসেম্বর পাক বাহিনীর অাত্মসমর্পন
১৬ ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা প্রাপ্তির বিজয় দিবস
১০ই জানুয়ারী ৭২ বুঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রর্ত্যাবর্তন
পাক বাহিনীর ধংশযজ্ঞে লন্ডভন্ড স্বাধীন দেশ
দেশ গড়ার প্রত্যয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু
১৯৭৪ সালে দেশী- বিদেশী স্বাধীনতার শত্রুদের কবলে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু
১৯৭৫ সাল জাতির ইতিহাসে কলংকিত সাল
১৯৭৫ সালের ১৫ অাগষ্ট জাতির ইতিহাসের
মহানায়ক স্বাধীনতার মহাকাব্যের মহাকবি
জাতির জনকের মহাপ্রয়াণ ৷ দেশী বিদেশী
স্বাধীনতার শত্রুদের বুলেটে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে পাপিষ্টের দল ৷ জাতি
মর্মাহত স্থম্বিত ও শোকাহত হৃদয়ে ক্ষোভ
নিন্দা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলে শোককে শক্তিতে পরিনত করে খুনীদের বিচার ও রায়ে
মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে ৷ জাতি বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রায় কার্যকর করার জন্য সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতার অঙ্গীকারাবদ্ধ ৷ জাতির গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পাশে
অামরাও ৷